সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:২২ পূর্বাহ্ন
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি, কালের খবর :
ও প্রেম আর আমার ভাল লাগে না/সে প্রেমের দায়ে জেল খাটলাম/তবু ঋণ শোধ হলো না। কিন্তু না সব প্রেম নিষ্ঠুর হয় না। কখনো শেষ হয় না সত্যিকারের ভালবাসা। লালন ফকিরের এই গানকে মিথ্যে প্রমাণ করলেন রাসেল-তানিয়া প্রেমিক জুটি।
চট্টগ্রাম কারাগারে বিয়ে করে বুঝিয়ে দিলেন প্রেম চিরসুন্দর, প্রেম শাশ্বত-অবিনশ^র। বিয়ের প্রায় এক সপ্তাহ পর চট্টগ্রাম কারাগারের বাইরে এমন এক প্রেমিক জুটির প্রেমের অনাড়ম্বর বিয়ের খবর ছড়িয়ে পড়ে বৃহস্পতিবার।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক (জেল সুপার) ইকবাল কবির চৌধুরী বলেন, বিয়ে হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বলতে আদালতের নির্দেশ লাগবে। বৃহস্পতিবার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি স্বীকার করেন চট্টগ্রাম কারাগারে বেসরকারি কারাপরিদর্শক আবদুল মান্নান।
তিনি বলেন, ভাই হাজার হলেও বিয়ে তো, দুটো জীবনের মিলন। তাই আমাদের পক্ষ থেকে হাল্কা মিষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কারারক্ষী, আইনজীবী আর দুই পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতিতে অনাড়ম্বর পরিবেশে এ বিয়ে সম্পন্ন হয় বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, রাসেল-তানিয়ার প্রেম শুরু আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে। চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানার মাস্টারপোল এলাকার ইকবাল কলোনীতে এই জুটির বসবাস। রাসেলের বয়স ছিল তখন ২১, আর তানিয়ার বয়স ১৮। কিন্তু বাধা ছাড়া কি আর প্রেম পুর্ণতা পায়! চিরায়ত নিয়মে রাসেল ও তানিয়ার স¤পর্কের মাঝে দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় দু’জনের পরিবার।
এ নিয়ে দুই পরিবারের বিরোধ চরমে পৌঁছে। রাসেলের বিরুদ্ধে মামলা করে তানিয়ার বাবা। প্রেমের দায়ে জেলে যেতে হয় রাসেলকে। গত প্রায় দু’বছর এক মাস ধরে জেলের ঘানি টানছেন রাসেল।
তবুও জাগতিক বিরোধের কাছে হেরে যায়নি রাসেল-তানিয়ার শাশ্বত ভালোবাসা। সব বাধা ডিঙ্গিয়ে রাসেল জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে তানিয়াকে। আদালতের নির্দেশে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বিয়ে হয় রাসেল-তানিয়া জুটির।
রাসেলের আইনজীবী এডভোকেট মো. ইসহাক বলেন, প্রায় দু’বছর আগে তানিয়ার পরিবার রাসেলের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাকলিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সে সময় রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সম্প্রতি দু‘পরিবারের সম্মতিতে মামলা তুলে নেয়ার জন্য আবেদন করা হয়। কিন্তু চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত এ আবেদন নামঞ্জুর করলে হাইকোর্টে রিভিশন করেন তারা। পরে হাইকোর্ট জামিনের শর্ত হিসেবে রাসেল ও তানিয়ার বিয়ের আদেশ দেন।
আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক ইকবাল কবির চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে ও বেসরকারি কারাপরিদর্শক আবদুল মান্নানের উপস্থিতেতে রাসেল ও তানিয়ার বিয়ে স¤পন্ন হয়। এখন বিয়ের সার্টিফাইট কপি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র হাইকোর্টে পৌঁছালে রাসেলের জামিন হবে বলে আশা করছেন তিনি।
বৃহ¯পতিবার সকালে কথা হয় রাসেলের ছোট বোন ইয়াসমিনের সঙ্গে। তিনি এ ঘটনার শুরুর দিককার কথা জানাতে গিয়ে বলেন,আমাদের জন্ম, ছোট থেকে বেড়ে উঠা সবই এই ইকবাল কলোনীতে। রাসেল ভাই-তানিয়া আপু সবাই একসঙ্গে এখানে বড় হয়েছে। বছর তিনেক আগে তাদের মধ্যে ভালোবাসার স¤পর্ক গড়ে উঠে। প্রথম প্রথম আমরা কয়েকজন জানলেও পরিবারের কেউ জানতো না বিষয়টি।
কয়েকমাস পর বিষয়টি জানাজানি হলে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। তানিয়া আপুর পরিবার তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কিন্তু তিনি রাসেলকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিলেন না।
২০১৬ সালের ৩০শে রমজানে তানিয়া আপু রাসেল ভাইয়ার সঙ্গে একবার দেখা করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু তার মা-বাবার ভয়ে পারছিলেন না। শেষমেষ রাত আড়াইটার দিকে তিনি আমাদের পাড়ার গলিতে রাসেল ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করতে যান। কিন্তু বিধিবাম, তারা ধরা পড়ে যান তানিয়া আপুর বাবার হাতে।
এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তানিয়া আপুর বাবা আব্দুল শুক্কুর বাকলিয়া থানায় রাসেলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা করেন। রাসেল গ্রেপ্তার হয়। মামলা যায় চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে। রাসেলের পরিবার বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও তার জামিন করাতে পারেনি।
এদিকে, তানিয়ার পরিবার বাকলিয়া ছেড়ে চলে যায় জামালখানে। তানিয়াকে গ্রামের বাড়ী নিয়ে গিয়ে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তানিয়ার অমতে তা কোনোভাবেই হচ্ছিল না। শেষমেষ কয়েকমাস আগে তানিয়ার পরিবার মামলা তুলে নিতে সম্মত হয়। কিন্তু আদালত তা নামঞ্জুর করেন। পরে তারা হাইকোর্টে রিভিশন করেন। এসময় হাইকোর্ট জামিনের শর্ত হিসেবে রাসেল ও তানিয়ার বিয়ের আদেশ দেন। পরে দুই পরিবারের সম্মতিতে কারাগারে রাসেল ও তানিয়ার বিয়ে হয়।
কালের খবর /২২/২/১৮